বেনাপোলে পুলিশের সোনা আত্মসাতের ঘটনা ফাঁস!
বেনাপোল: সোনা পাচারের ট্রানজিট রুট যশোরের বেনাপোল থেকে আটকের পর ওসি ও এএসআই রফিক সহ পুলিশের সোনা আত্মসাতের গোমর ফাঁস হয়ে গেছে।
সোনা পাচার সিন্ডিকেটের হোতা মোমিনকে যশোর ডিবি পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে পড়ে পোর্ট থানার ওসি কাইয়ুম ও সহকারী দারোগা রফিকের অপকর্মের থলের বিড়াল।
আটকের পর প্রায় কোটি টাকার সোনা পুলিশ লোপাট করে বলে মোমিন জানায়। এদিকে, ডিবি পুলিশের কাছে মোমিন স্বীকারোক্তি দেয়ার খবর জানার পর ওসি ও এএসআই রফিক বৈঠক করেন।
এরপর থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না সহকারী দারোগা রফিককে। পরে তার স্ত্রীও প্রাইভেট ভাড়া করে বেনাপোল ছেড়েছে বলে জানা গেছে। নিজের গা বাঁচিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওসি ও যশোর খুলনায় দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, গত ২ জানুয়ারি বেনাপোল পোর্ট থানার বিতর্কিত এএসআই রফিক বেনাপোলের কাগজপুকুর মোড় থেকে বিপুল পরিমান সোনা আটক করেন। এ সময় পাচারকারী চক্রের হোতা মোমিন নামে একজনকে পুলিশ আটকও করে।
এই সোনা উদ্ধার অভিযানের সময় এএসআই রফিক নানান নাটকীয় সব কর্মকান্ডের পর পোর্ট থানার ওসির সহায়তায় বিপুল পরিমাণ সোনা আত্মসাত করেন। ৩৬টি সোনার বার উদ্ধার দেখিয়ে ওসি কায়ুম ও এএসআই রফিক বাকিগুলো হজম করেন।
পুলিশের সোনা আত্মসাতের এই ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র ও এএসপি (ক) সার্কেল মিলু মিয়া বিশ্বাস তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যান। তবে তার আগেই ওসি ও বিতর্কিত এএসআই রফিক আটক মোমিনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশ সুপারের সামনে তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ায়।
এ ঘটনার দু’দিন পরেই সোনার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পুলিশের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে গত ৮ জানুয়ারি রাতে ওসি সস্ত্রীক খুলনায় ছোটেন। যশোর ও খুলনার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নামে খরচ দেখিয়ে কোটি টাকার সোনা হজমের উদ্যোগ নেন ওসি ও রফিক।
যা নিয়ে ফের তোলপাড় শুরু হলে যশোর পুলিশ সুপার মামলাটি যশোর ডিবি অফিসে স্থানান্তর করেন। ডিবি পুলিশ সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেটের হোতা মোমিনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে পড়ে থলের বিড়াল।
মোমিন ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ৫১ টি সোনার বারসহ আটক হওয়ার কথা স্বীকার করে। গত সোমবার মোমিন আদালতে এ ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। যাতে বেরিয়ে এসেছে ঘটনার সবিস্তার।
সূত্র মতে, বেনাপোলের কাগজপুকুর এলাকা থেকেই এএসআই রফিক ৫১ টি সোনার বারসহ পাচারকারী চক্রের হোতা মোমেনকে আটক করে। সোনাসহ আটকের পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় আরও একজন এএসআইসহ ৩ জন কনস্টেবল সেখানে যান।
লোপাট বাণিজ্য শেষে থানায় এনে ৩৬টি বারসহ মোমিনের নামে মামলা দেয়া হয়। এই সোনা লোপাটের মূল হোতা খোদ ওসি বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। আর এ কারণেই বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কাইয়ুম সোনা লোপাটের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই এএসআই রফিকের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
সোনা পাচারকারী মোমিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার পর ওসির সাথে বৈঠক করেন কোটি টাকার সোনা লোপাটের মূল হোতা এএসআই রফিকুল ইসলাম রফিক। ওসির সাথে বৈঠকের পরই রফিক বেনাপোল থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। এর পরপরই একটি প্রাইভেট নিয়ে থানার পাশে ভাড়া বাসা থেকে তার পরিবারও সটকে পড়ে। থানা থেকে এএসআই রফিকুল ইসলাম রফিক পালিয়ে গেছে বলে অনেক পুলিশ সদস্য বলেছেন।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি কাইয়ুম আলী সরদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সোমবার রাতে যশোর এএসপি সার্কেল বিষয়টি তদন্ত করতে বেনাপোল আসেন। এর পর থেকে স্বর্ণ মামলার আটক কর্মকর্তা এএসআই রফিককে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মোবাইল ও বন্ধ রয়েছে। থানার পাশে যে বাড়িতে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন সে বাড়িটি এখন তালাবন্ধ।
তিনি আরো জানান, রফিক কোন ছুটি নেয়নি। সোনার মামলা ডিবিতে, তারাই এ বিষয়ে বলতে পারে।’ এ ব্যাপারে ডিবির ওসি মনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মোমিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়াসহ সোনা আত্মসাতের গোমর ফাঁস হওয়ার কথা স্বীকার করেন।