jibannagar sako pic-02-01-14মারুফ মালেক,জীবননগর: ব্রিজের অভাবে জীবননগর উপজেলার দু’টি ইউনিয়নের চারটি গ্রামের  শত শত মানুষ প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোতে পারাপার হচ্ছে।

অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নিজেদের প্রয়োজনে অনেকটা বাধ্য হয়েই নারী-পুরুষ ও আবাল বৃদ্ধবণিতা স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর ধরে এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সরকার আসে সরকার যায় ভৈরব নদীর দু’পাশের বাসিন্দাদের জন্য এপর্যন্ত কেউই একটি ব্রিজের ব্যবস্থা করেনি।

দেশে জাতীয় নির্বাচন এলে ভোট নিতে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট পার হলে তা বেমালুম ভূলে যায় জনপ্রতিনিধিরা। বর্তমানে সাঁকোটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ব্রিজের অভাবে ঝুঁকি নিয়েই এলাকাবাসী বাঁশের তৈরী সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ সাঁকোটি দূর্বল হয়ে পড়ায় যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরণের দূঘর্টনার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়,এক সময়ের খরশ্রোত ভৈরব নদী। এ নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হলেও বর্ষা মৌসুমে পানিতে কানায় কানায় ভরে যায়।

এ নদীর কোল ঘেষে বাঁকা ্ইউনিয়নের মোক্তারপুর ও মিনাজপুর এবং মিনাজপুর মাঠপাড়া গড়ে ওঠে। অন্যদিকে উথলী ইউনিয়নের কাশিপুর মাঠপাড়ায় বসবাস গড়ে ওঠে।

এ চারটি গ্রামে অর্ধলক্ষাধিক লোকের বসবাস রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে  চলাচল করলেও তাদের দূর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসেনি কোন জনপ্রতিনিধি। এলাকাবাসী জানায়,

উক্ত চারটি গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ এ সাঁকো দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে। নদীর ওপর ব্রিজ না থাকায় সবচেয়ে বেশী দূর্ভোগের শিকার হয় স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থরা। অন্যদিকে এ অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্য তুলতে এবং বিক্রি করতেও পোহাতে হয় চরম দূর্ভোগ।

ব্রিজের অভাবে তাদেরকে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। মহিলারা চরম ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে তাদের ছোট শিশুদের পারাপার করে থাকে। বৃদ্ধ ও অসুস্থ্যদের জন্য এ বাঁশের সাঁকোটি একটি ভয়ংকর পারাপার ব্যবস্থা। এ চারটি গ্রামের অনেক মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে রাতের আধারে চরম ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পারাপার হয়ে থাকে।
মিনাজপুর গ্রামের রফিকুল ইসলম,মসলেম উদ্দিন কাশিপুর মাঠপাড়ার সুমন,সলেমান,আমানউল্যাহ জানায়,স্বাধীনতার ৪২ বছর পার হলেও এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোন সরকারের আমলেই কোন কাজ হয়নি। তারা জানান,দেশের জাতীয় নির্বাচন এলে প্রার্থীরা এব্রিজটি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত কোন কেউই তা করেনি।

বর্তমান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি হাজী আলী আজগার টগর নির্বাচনের সময় ভৈরব নদীর ওপর একটি ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এসএসসি পরিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম,নবম শ্রেনীর ছাত্র মিঠু ও পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র মামুন জানায়,তারা প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয়।

সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেক সময় পা ছিঁটকে পানিতে পড়ে যেতে হয়। কাশিপুর মাঠপাড়ার সমাজকর্মি খোরশেদ আলম জানান,এ অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত সবজী এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। তার মতে ভৈরব নদীতে একটি ব্রিজ করা হলে এলাকার অভূত উন্নয়ন সাধিত হবে।

মিনাজপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান,নদীতে ব্রিজ না থাকায় মাঠের ফসল তুলতে কৃষকদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সাঁকোটি বর্তমানে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় সাঁকো ভেঙ্গে পড়তে পারে।
এব্যাপারে জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজা জানান,এলাকার উন্নয়নে কাশিপুর মাঠপাড়া ও মিনাজপুর গ্রামের মধ্যদিয়ে প্রবাহমান ভৈরব নদীতে একটি অতি জরুরী। কিন্তু নদীর দু’প্রান্তে রাস্তার করার মত সরকারী জমি না থাকায় এবং এলাকার কেউ ব্যাক্তিগত জমি না দেয়ায় ব্রিজ নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে একটি ব্রিজের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।