কুষ্টিয়ায় তামাক ক্ষেতে কৃষক পরিবারের সন্তানরা শিক্ষা বঞ্চিত
কুষ্টিয়া: শিক্ষাখাতে সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধা কাজে লাগাতে পারছেনা কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তানরা।
কেননা জানুয়ারী থেকে মার্চ, বছরের অন্তত এই তিন মাস তাদের কাটাতে হয় তামাক ক্ষেতে নানামুখি পরিচর্যা কাজে।
বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, ক্ষেতে চারা রোপন, ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করা, ক্ষেতে বিষ দেয়া, তামাক পাতা উত্তোলন, তামাক পোড়ানো এমনকি তামাক বাজার জাত করার কাজেও জড়িয়ে আছে শিশু শ্রম।
আর্থিক বিবেচনায় তামাক চাষীদের শ্রেণী বিভাজন অনুযায়ী সমর্থ তামাক চাষী এবং ব্যাবসায়ী তামাক চাষী পরিবারের সন্তানরা তামাক চাষের সংস্পর্শে না আসলেও ওৎপ্রতোভাবে জড়িয়ে পড়ছে দরীদ্র কৃষক পরিবারের সন্তানরা।
বিশেষ করে যেসব কৃষকের অর্থের বিনিময়ে শ্রম কেনার সামথ্য নেই ওই সব পরিবারের সন্তানরাই তামাক চাষের সাথে জড়িত হচ্ছে।
কুষ্টিয়া এখন তামাকের জেলা। কেননা এখানকার দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ দখলে নিয়েছে তামাক। গত ৫ বছরের গড় হিসেবে কুষ্টিয়ায় প্রতি বছর ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।
এ বছরে তামাক আবাদ হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টও জমিতে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের আকবর আলী তার বড় ছেলে সুমনকে সাথে নিয়ে তামাক ক্ষেত পরিচর্যার কাজ করছে। আকবর আলী জানান, সুমন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সিমা ক্লাস টু। কিন্তু তামাক মৌসুমে ওদের স্কুলে যাওয়া হয়না।
মাঝে মধ্যে যায় আরকি। কেন তামাক মৌসুমে স্কুলে যেতে নিষেধ? আকবর আলী জানালো নিষেধ না, তবে নিজের প্রয়োজনেই স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়না। এই সময়ে স্কুলে গেলে লেবার নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু লোক দিয়ে কাজ করানোর সামর্থ তার নেই। আকবর আলী একজন লিজি চাষী। নিজেরও জমি আছে ১০ কাঠা।
সেখানে ধান রোপন করেছেন। তামাক চাষের জন্য ২ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। ভাল ফলন এবং বাজার মূল্য পেলে সংসার ভালই চলবে। টাকা দিয়ে শ্রম কেনার সামর্থ নেই তার, আর এ কারণেই বউ-বাচ্চা নিয়ে তামাক ক্ষেতে কাজ করতে হচ্ছে। এজন্যই ছেলে-মেয়ে স্কুলে যেতে পারেনা। আর এভাবেই একদিন ওরা ছিটকে পড়বে শিক্ষা জীবন থেকে।
১৯৭৫ সালের কথা। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগল বাড়িয়া ইউনিয়নের দর্গা গ্রামের কালু বিশ্বাসকে দিয়ে, কৌশলে তামাক চাষ করায় বিএটিবি। সেই থেকে যাত্রা শুরু। এখন কুষ্টিয়ার বেশিরভাগ উর্বর জমি দখল করে নিয়েছে তামাক কোম্পানী। কেবল জমি দখল করছে না, আমাদের সন্তানদের বঞ্চিত করছে শিক্ষা থেকে।
আর রোগ-শোকতো তামাক চাষী পরিবারের নিত্যসঙ্গী। তামাক কোম্পানীর মাঠকর্মী আবার মুনাফালোভী ব্যাবসায়ীরা বুক ফুলিয়ে বলে থাকে তারা কুষ্টিয়ার জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতা বয়ে এনেছে। কিন্তু এ কেমন স্বচছলতা !
যে স্বচ্ছলতা শিশুকে শিক্ষা জীবন থেকে দুরে সরিয়ে রাখে! এ কেমন স্বচ্ছলতা, যে স্বচ্ছলতায় কৃষক পরিবারকে সারা বছর রোগ-শোক বহন করতে হয়। এ প্রশ্নের জবাব বোধকরি সবার জানা নেই।তবে যাদের জানার কথা তারাও নিরব। সফল সমাজ সেবক হিসেবে বিশেষ
কুষ্টিয়ায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদকুষ্টিয়া, ৬ জানুয়ারি : কুষ্টিয়ায় মানা হচ্ছে না তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন। তামাক কোম্পানিগুলোর লোভনীয় আশ্বাসের ফলে প্রতিবছরই বাড়ছে চাষের ব্যাপকতা। আর এই তামাক চাষের কারণে কুষ্টিয়া জেলায় খাদ্যশস্য ঘাটতির পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
বর্তমানে ওই সব জমিতে আবাদ হচ্ছে বিষবৃক্ষ তামাক। কুষ্টিয়া জেলায় আবাদযোগ্য জমি রয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার হেক্টর। সেখানে জেলায় চলতি মৌসুমে তামাকের আবাদ হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টরে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ধূমপান করে।এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিটি সিগারেট ১১ মিনিট করে মানুষের জীবন থেকে আয়ু কেড়ে নিচ্ছে।
ধূমপানের কারণে করোনারি, হার্ট অ্যাটাক, প্যারালাইসিস, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা, ফুসফুসের ক্যানসার, চোখের সমস্যা, দাঁত ও মাড়ির সমস্যাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় চার লাখ লোক ধূমপানের কারণে পঙ্গুত্ববরণ করছে। এর মধ্যে মারা যাচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার