দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা : আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকজন তরুণ নারী নেত্রী আসতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের গত সম্মেলনের চেয়ে এবার বেশি সংখক নারী নেত্রীকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেওয়া হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) শর্ত ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা বাড়াতে চায় দলটি।

তবে শর্ত পুরোপুরি পূরণ করতে না পারলেও (বর্তমানে আছে ১৮ শতাংশের কিছু বেশি) এবারের সম্মেলনে ২৫ শতাংশ ছুঁতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। তা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে আওয়ামী লীগ যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাও প্রতিষ্ঠা করা হবে দলের নারী নেতৃত্বের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাল শুক্র ও শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবার দলের প্রায় ১৫ হাজার কাউন্সিলর এবং প্রতিনিধি অংশ নেবেন।

তাঁদের বাইরেও দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকবেন। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষের জমায়েত এবং খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ সাজানো হয়েছে পদ্মা সেতুর আদলে। শুক্রবার উদ্বোধনী পর্বে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, শোক প্রস্তাবসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালিত হবে। শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিবেশন বসবে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধির তালিকায় বর্তমান ও সাবেক নারী এমপিরা অগ্রাধিকার পাবেন। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মহিলা এমপিদের মধ্যে গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজ চুমকি, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্তা, মানিকগঞ্জ-২ আসনের মমতাজ বেগম, রংপুর-৬ আসনের শিরীন শারমিন চৌধুরী, গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি এগিয়ে আছেন।

দশম জাতীয় সংসদের ৪২ জন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদে ৪০ জনই বাদ পড়েছেন। বাদ পড়া এসব এমপির মধ্যে তারানা হালিম, মাহজাবিন খালেদ, নূরজাহান বেগম মুক্তা, সানজিদা খানম, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, সাবিনা আক্তার তুহিন এবার স্থান পেতে পারেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

সংরক্ষিত আসনের বর্তমান ৪৩ এমপির মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির আলোচনায় আছেন সৈয়দা জাকিয়া নূর, সুবর্ণা মোস্তফা, শিরীন আহমেদ, রাবেয়া আলীম, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, ওয়াসিকা আয়শা খান।

এছাড়াও কমিটিতে নতুন যারা যুক্ত হতে পারেন এমন নারী নেত্রীর মধ্যে আলোচনায় আছেন- নারায়ণগঞ্জের মেয়র আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক পিএস ১ ও ঢাকা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সেলিমা খাতুন (ওয়াজেদ মিয়ার ভাগ্নি), শহীদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি লুৎফুন্নাহার মুন্নি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমেনা বেগম কহিনুর,

বরিশালের প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের স্ত্রী জেবুন্নেছা হিরণ, শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী আমেনা কোহিনূর, রো‌জিনা রোজী, ব্যারিস্টার ফারজানা, ছাত্রলীগের সা‌বেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি প্রমুখ। সম্ভাব্য সবার আমলনামা যাচাই করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারীদের ক্ষমতায়নে খুবই আগ্রহী। সেহেতু নারীদের আওয়ামী লীগে ভালো একটা অবস্থান হোক এটা আমিও চাই। তবে আমি চাইব তারা যেন অবশ্যই বিশুদ্ধ আওয়ামী লীগের হয়। রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ডে যাদের জামায়াতে ইসলামীর সম্পৃক্ততা আছে, দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততা আছে; এমন কেউ যেন না আসে । আওয়ামী লীগের ২১তম সম্মেলনে একজন শহীদ পরিবারে সদস্য হিসেবে এটাই আমার কামনা। আমরা চাই একটি বিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২০১৬ সালের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনাসহ নারী নেতৃত্বের সংখ্যা হলো ১৫ জন। তারা হলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন দীপু মণি। দলের সম্পাদক পদে আছেন পাঁচ নারী। তাদের মধ্যে কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী,

মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে আছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিমিন হোসেন রিমি, বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান, মারুফা আক্তার পপি।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা বলেন, দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে এবার ব্যাপক রদবদল আনা হবে। কালিমালিপ্তদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাবেক ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে আনা হবে। নতুন নেতৃত্বের যে প্রত্যাশা আমরা করছি এর প্রতিফলন ঘটবে এবার।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, সেটা মাথায় রেখেই শেখ হাসিনা যোগ্য ও মেধাবী নারীদের নেতৃত্বে আনবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের সকল সম্মেলনেই নেতৃত্বের পরিবর্তন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে হয়ে থাকে। এবারও তেমনই হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণরাই সামনের দিকে আসবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে কেউই বাদ যায় না, শুধু দায়িত্বের পরিবর্তন হয়। এখানেও অনেককে দায়িত্ব পরিবর্তন করে সাবেক ছাত্র নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।