এফ জাহান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তিন মাসের ব্যবধানে হাজার কোটি টাকার লেনদেন ২০০ কোটিতে নেমেছে। নতুন করে তালিকাভুক্ত হচ্ছে দুর্বল কোম্পানিগুলো। পুঁজিবাজারের এই অবস্থার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) দায়ী করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, গুটিকয়েক কারসাজিকারীর স্বার্থে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জিম্মি করে কৃত্রিম এই সংকট তৈরি করা হয়েছে। যাদের বাজার স্থিতিশীল করার দায়িত্ব ছিল, তারাই নিজেদের স্বার্থে বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিএসইসি।

এদিকে পুঁজিবাজারে গত কয়েক মাসের দরপতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে পাঁচ বহুজাতিক কোম্পানি শেয়ার বিক্রির প্রভাবে দরপতন আরো ত্বরান্বিত হয়। এসব কোম্পানির পতনে পুরো পুঁজিবাজারে কম্পন তৈরী হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে গ্রামীণফোন। এরপর ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বাটা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, এবং ইউনাইটেড পাওয়ার ও পতন ভ’মিকা রাখছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুঁজিবাজারে সবচেয়ে আলোচিত কোম্পানি গ্রামীণফোনের দর কমেছে ১৬ টাকা ৬০ পয়সা বা ৬.১০ শতাংশ। রেকিট বেনকিজারের দর কমেছে ১৫২ টাকা ৪০ পয়সা বা ৫ শতাংশ, এরপরে বাটা সুর দর কমেছে ১৩ টাকা ৪০ পয়সা বা ১.৯৪ শতাংশ। বিৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর দর কমেছে ১৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ১.৮০ শতাংশ।

তালিকায় থাকা অন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাফার্জহোলসিমের ৪.৪৯ শতাংশ, লিন্ডেবিডির দশমিক ৮৪ শতাংশ, ম্যারিকোর দশমিক ৪৪ শতাংশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দশমিক ৪০ শতাংশ, আরএকে সিরামিকসের দশমিক ৩৫ শতাংশ, বার্জার পেইন্টসের ১.৮৯ শতাংশ ও গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন লিমিটেডের ১.৮১ শতাংশ দর কমেছে।

ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, সূচক গণনা করা হয় কোনো কোম্পানির ফ্রি-ফ্লোট বা বাজারে সচরাচর লেনদেনযোগ্য শেয়ারের বাজার মূলধন ও বাজারদর ওঠানামার ভিত্তিতে। ভালো মানের শেয়ারগুলোর বাজারদরও বেশি হওয়ায় এগুলোর বাজার মূলধনও অন্য কোম্পানির তুলনায় বেশি। মূলধন বাঁচাতে বিনিয়োগকারীরা যখন বড় কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করছেন, তখন কম-বেশি এসব শেয়ারের দরও কমছে।

বাজার মূলধনে কোম্পানিগুলোর অংশ বেশি হওয়ায় তা সূচকের পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। সূচক দেখে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করায় পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমদ বলেন, পুঁজিবাজারে কৃত্রিম দরপতন হচ্ছে। যদি তাই না হতো তবে প্রতিষ্ঠানগুলো কেন হাত গুটিয়ে বসে আছে? তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও দায়ী। কারণ গত সাত-আট বছরে ভালো কোনো কোম্পানি বাজারে আনতে পারেনি। ফলে যেসব কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে এসেছে, প্রিমিয়ামে টাকা নিয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে।