মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে: জাহাজ নির্মাণ করে ইউরোপ ও আফ্রিকায় বাজার সৃষ্টি করলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ভাগ্য জুটছে নামমাত্রা ডিভিডেন্ড। মুলত উদ্যোক্তাদের ব্যর্থতা, দ্বন্দ্ব, অদূরদর্শিতায় ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। প্রকৌশল খাতের এ কোম্পানিটি দ্রুত আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। একই সঙ্গে অতিরিক্ত ব্যাংকঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় তারল্য সংকটে পড়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। ফলে সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এছাড়া জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হয় ২০১৪ সালে। যদিও ২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত হওয়ার আগে থেকে প্রতিষ্ঠানটি নানা সংকটে আক্রান্ত ছিল। তখন প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ ছিল ৬৪৬ কোটি টাকা। এখন তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ বিপুল পরিমাণে অর্থ কাজে লাগাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। উল্টো ব্যর্থতার পাল্লা বেড়েছে। ফলে আর নতুন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নতুন করে অর্থায়ন করতে রাজি নয়।

জানা যায়, ২০০৯-১০ সালে জাহাজের ব্যাপক চাহিদা দেখে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নেয় ওয়েস্টার্ন মেরিন। কিন্তু ২০১২-১৩ সালের ইউরোপের মন্দার প্রভাবে  রফতানি আদেশ কমে যায়। বাতিল হয় কিছু অর্ডার। ফলে সংকটে পড়ে কোম্পানিটি। সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভাবে গত পাঁচ বছরেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমানে কোম্পানিতে জাহাজ নির্মাণের কাক্সিক্ষত অর্ডার এলেও পর্যাপ্ত তারল্য না থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে বড় ধরনের জাহাজ নির্মাণের চাহিদা থাকলেও দেশি লাইটার জাহাজ নির্মাণ করে টিকে আছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় এ শিপইয়ার্ডটি।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের তালিকাভুক্তির সময় মোট ঋণ ছিল ৬৪৬ কোটি টাকা। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে নেয় ৪৫ কোটি টাকা। এর পর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা নেয়। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তালিকাভুক্তির সময়ের তুলনায় ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে।

যদিও এত পরিমাণে ঋণ ও বিনিয়োগকারীদের অর্থের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ। এর মধ্যে গত এক বছর ধরে শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। সর্বশেষ গত পাঁচ মাস শিপইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া ১৭ মাসের ওভারটাইমের বেতনও পাননি। আর হেড অফিসের কর্মকর্তারা কয়েক মাস বেতন পাচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংক ও পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধে বারবার আশ্বাস দিয়েও প্রতিবারই ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ।

প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর ৩০ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ২৮২ কোটি টাকা ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল ৫৭ কোটি টাকা। এক বছর আগে এ ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৪১ কোটি টাকা। তার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল এক হাজার ৮৪ কোটি টাকা ও স্বল্পমেয়াদি ৫৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ঋণ বেড়েছে ১৯৮ কোটি টাকা।

ব্যাংক ঋণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ ছিল ৯১৩ কোটি কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ঋণ ছিল ৮১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ছিল ৬৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে ওয়েস্টার্ন মেরিনের ঋণ বেড়েছে ৬৭৩ কোটি টাকা।

জানা যায়, বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় ওয়েস্টার্ন মেরিন মোট ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড থেকে। ব্যাংকটি থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ৬৩২ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া থেকে ২৬৬ কোটি, সোনালী ব্যাংক থেকে ১১৬ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ১০১ কোটি এবং বাকি অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২২৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়।

পাওনাদার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এখন ডুবন্ত তরি। পাঁচ-ছয় বছর আগে থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে ব্যাংক দায়ের পরিমাণ। আর দুই বছর আগে থেকে নিয়মিত ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে একাধিকবার ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। তখন প্রতিনিয়ত পাওনাদার ব্যাংক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ছুটে যেতেন ওয়েস্টার্ন মেরিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। এর মাঝে সাবেক অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিলে ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করে কোম্পানিটি।

এখন নতুন করে আরও ঋণ সুবিধা পাওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিনের পরিচালকরা বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডির কাছে ছুটছেন। কিন্তু কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নতুন করে অর্থায়নের ঝুঁকি নিতে রাজি নয়, উল্টো বকেয়া পাওনা ফেরত প্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছে। তারা আরও বলেন, পাওনা পরিশোধের ব্যর্থতায় চেক প্রত্যাখ্যানের একাধিক মামলা হয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া দুবাইভিত্তিক জাহাজ নির্মাণকারী কোম্পানি আল-রশিদ শিপিং লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশি জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের যে চুক্তি হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হলে হয়তো সারা বিশ্ব বাংলাদেশের কারিগরি দক্ষতার একটি প্রমাণ দেখতে পেত। কারণ চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে তিনটি জাহাজ বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, যেগুলো সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকা বহন করে সগৌরবে ঘুরে বেড়াবে নানা দেশের সমুদ্রে এবং পৌঁছে দেবে বিভিন্ন পণ্য। কিন্তু তা হয়নি। এর বদলে ২০১৮ সালে সম্পন্ন হওয়া এই চুক্তি শেষ হয়েছে ব্যয়বহুল একটি মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে।

নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে জাহাজ ডেলিভারি দিতে না পারায় আল-রশিদ শিপিং কোম্পানি হাইকোর্টে প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে। গত বছরের জুনে হাইকোর্টে দায়ের করা এক পিটিশনে আল-রশিদ শিপিং কোম্পানি জানায়, এই ক্ষতিপূরণের টাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এখনো পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন মেরিনকে প্রদানকৃত পারিশ্রমিক, তাদের নিজস্ব ব্যয়, ব্যবসায়িক ক্ষতির পরিমাণ, লভ্যাংশ ও আইনি খরচসমূহ। ইতোমধ্যেই তারা ওয়েস্টার্ন মেরিনের সঙ্গে হওয়া চুক্তি ২০২০ সালের ১৮ মে বাতিল করে দিয়েছে।

বাংলাদেশি জাহাজ কোম্পানিটির সঙ্গে আল-রশিদ শিপইয়ার্ড প্রায় ৫০ কোটি টাকার দুটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী জাহাজের যন্ত্রপাতি উৎপাদন, নির্মাণ, স্থাপন , আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন  একটি ৬৭ মিটারের এএইচটিএস জাহাজ ও দুটি ৬৫০০ টন ডেডওয়েটের ট্যাংকার চালু করা এবং তা ডেলিভারি দেওয়া ছিল ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাজ। প্রথম ধাপের পারিশ্রমিক দেওয়ার ১৮ মাসের মধ্যেই দুবাইয়ের কোম্পানিকে তিনটি জাহাজ ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও ওয়েস্টার্ন মেরিন কোম্পানি তাদের জাহাজ বানানোর কাজই শুরু করতে পারেনি। যদিও তারা আট কোটি টাকারও বেশি পারিশ্রমিক নিয়েছিল।

ওয়েস্টার্ন মেরিনের সঙ্গে আল-রশিদ কোম্পানির চুক্তি সাক্ষর হয় ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর। কিন্তু এরপর থেকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শুধু জাহাজের একটি প্লেট তৈরি ছাড়া আর কোনো কাজই করেনি। অন্যদিকে, আল-রশিদের কাছ থেকে তারা ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর প্রথম ধাপে এএইচটিএস জাহাজের জন্য ৫ লাখ ডলার এবং ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দুটি ট্যাংকারের জন্য ৩ লাখ চল্লিশ হাজার ডলার নিয়েছে।

জানা যায়, আল-রশিদ কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে তারা নিজেদের কর্মীদের বেতন, বোনাস ও অন্যান্য বিল দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্যানেল বা ব্লক নির্মাণের ২৫ শতাংশ কাজ হবার পরেই ওয়েস্টার্ন মেরিন দ্বিতীয় ধাপের পারিশ্রমিক চাইতে পারবে- এমন কথা থাকলেও তারা বারবার আল-রশিদের কাছে টাকা চেয়ে নিয়েছে বলে পিটিশনে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আল-রশিদ শিপিং লিমিটেডের আইনজীবী শাহ মুহাম্মদ এজাজ রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই ওয়েস্টার্ন মেরিনকে প্রচুর টাকা দিয়েছি, তবু তারা কাজ শুরু করেনি। এটি আমাদের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে এবং আমাদের কঠিন সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। গত মাসে হওয়া শুনানিতে হাইকোর্ট ৭ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন এবং এরমধ্যে আপসে সমস্যা সমাধানের সুযোগ দিলেও আমরা ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কাছ থেকে কোনো রকম প্রস্তাব পাইনি।’

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহাইল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা যতখানি পারিশ্রমিক পেয়েছি, সে অনুযায়ীই কাজ করেছি। আমরা রড, বিদেশি স্টিল ইত্যাদি কিনেছি এবং ডিজাইন অনুমোদন করিয়েছি। আমাদের ৪০০-৫০০ কর্মীর বেতন-বোনাস, শিপইয়ার্ডের ইলেকট্রিক বিল ইত্যাদি দিতে ওই টাকা আমরা অ্যাডভান্স নিয়েছি, যা পরবর্তী পেমেন্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হবে।’

আল-রশিদ শিপইয়ার্ডের পিটিশন: বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে অনেক অসামঞ্জস্য দেখিয়ে আল-রশিদ কোম্পানি পিটিশনে জানায়, বারবার টাকা দেওয়ার পরও ওয়েস্টার্ন মেরিন জাহাজ তৈরির কাজ শুরু করেনি। এমনকি তারা পরের ধাপের পারিশ্রমিকের সঙ্গে আগের নেওয়া টাকার মিল করে দেবে বলেও জানিয়েছিল। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত আল-রশিদ তাদেরকে ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৭ ডলার দিয়েছে। দুবাইভিত্তিক এই জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি জাহাজের দুটি ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশে পাঠায়। কিন্তু ওয়েস্টার্ন মেরিন সেগুলো এখনো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করেনি।

২০১৯ সালের ২১ মে ওয়েস্টার্ন মেরিন আবারও আল-রশিদের কাছে দ্বিতীয় ধাপে টাকা চায় ট্যাংকারের কাজ শুরু করবে বলে। ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি বন্দর থেকে ছাড়িয়ে নেবার চার্জ দেখিয়ে তারা আবারও আল-রশিদের কাছে টাকা চায়। জবাবে আল-রশিদ শিপইয়ার্ড জানায়, তারা কাজের অগ্রগতি দেখলে ওয়েস্টার্ন মেরিনকে আর্থিক সহায়তা করবে। কিন্তু তখন ওয়েস্টার্ন মেরিন কোনো অগ্রগতির প্রমাণ দিতে পারেনি। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা যন্ত্রাংশের ওয়ারেন্টির মেয়াদ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে যায়। ফলে ওয়েস্টার্ন মেরিনের এই গাফিলতির কারণে আল-রশিদকে এসব পণ্যের বাড়তি খরচ পরিশোধ করতে হয়।

চুক্তি বাতিল: ২০২০ সালের ১৮ মে আল-রশিদ শিপিং কোম্পানি তাদের চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। জাহাজ বানানো কোম্পানিটি এখনো তাদের কোনো জবাব দেয়নি।

এই প্রেক্ষিতে ওয়েস্টার্ন মেরিনের সোহাইল হাসান বলেন, ‘আল-রশিদ দুটি ইঞ্জিন পাঠিয়েছিল, কিন্তু আমরা এর জন্যে কোনো টাকা ধরিনি এবং কোনো এলসি-ও (লেটারস অব ক্রেডিট) খুলিনি। এইসব কারণে আমরা বন্দর থেকে পণ্যগুলো ছাড়াতে পারিনি। আল-রশিদ আমাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছিল, কিন্তু এতে কিছুটা সময় লাগে। তার ওপর আমাদের দেশে পণ্য ছাড়ানোর প্রক্রিয়া এমনিতেই ধীরগতিতে চলে; কারণ এর সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্ড জড়িত।’

সোহাইল আরও বলেন, ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের পেছনে আমাদের কিছু টাকা খরচ হয়। আমরা বলেছিলাম, এই টাকা পরবর্তী ধাপের পারিশ্রমিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে দেব। কিন্তু এই পর্যায়ে তারা আদালতে গিয়েছে।’

‘হাইকোর্ট আমাদেরকে নিজেরা বসে এই সমস্যা সমাধানের সময় দিয়েছেন। যদি আমরা একসঙ্গে বসি, হয়তো কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে। সেইসঙ্গে আমরা বন্দর ও শুল্ক ব্যয়ও কমাতে পারব,’ আরও জানান সোহাইল। তবে এতকিছুর পরও ওয়েস্টার্ন মেরিন এখনো আগের মতোই জাহাজ বানাতে চায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী জাহাজ শিল্প সংগঠনের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহহিল বারি মন্তব্য করেন, ‘এটি খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কারণ এটি শুধুই ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের জন্য নয়, আমাদের দেশের সুনামও নষ্ট করেছে। এর ফলে বাইরের দেশে আমাদের ভাবমূর্তির ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। কেননা, বদনাম খুব দ্রুত ছড়ায়।’

বারি আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা উচিত, যেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের বাজার নিশ্চিত রাখা যায়। একবার সেখানে বাজার সৃষ্টি হয়ে গেলে সেখান থেকে আর কেউ আমাদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না।’

পুঁজিবাজারে আসার আগে ৩০ জুন ২০১৩ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ছিল তিন টাকা ৮৭ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য বা এনএভি ছিল ৪০ টাকা ২৭ পয়সা। প্রকৌশলী খাতের এ কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি টাকা।

কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি ৫২ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।