বরিশাল ব্যুরো, দেশ প্রতিক্ষণ: দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার ভরসাস্থল বরিশাল শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ১২টি অ্যাম্বুলেন্স গ্যারেজে পড়ে আছে। তাই এসব অ্যাম্বুলেন্স রোগীরা ব্যবহার করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ব্যবহার করছেন। আর এই সুযোগে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সগুলো গ্যারেজে রেখে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গ্যারেজে থেকে ইতোমধ্যে ৭টি অ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, শেবাচিমের কয়েকজন স্টাফ ও কর্মকর্তা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রেখে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসকে সুযোগ করে দিচ্ছেন। ফলে রোগীদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে।

শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে কোনো স্টাফ জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জানা যায়, ১ হাজার শয্যার এই হাসপাতালে ১২টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। যার মধ্যে ৪টি পুরাতন দীর্ঘ বছর ধরে গ্যারেজে পড়ে আছে। সেগুলো ব্যবহার উপযোগী নয়। নতুন গ্যারেজে রয়েছে আরও ৮টি। এর মধ্যে আবার ৩টি বিকল।

বাকি ৫টি অ্যাম্বুলেন্স সচল থাকলেও ভারত থেকে উপহার দেওয়া লাইফ সাপোর্ট সুবিধা সংযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সটি কোনো কাজে আসছে না। কারণ সেখানে লাইফ সাপোর্ট সুবিধা থাকার কথা বলা হলেও কোনো যন্ত্রপাতিই নেই। এমনকি ভারী এই অ্যাম্বুলেন্সে কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। যে কারণে কোনো সার্ভিসে যেতে পারছে না। এক অ্যাম্বুলেন্স চালক জানান, এই অ্যাম্বুলেন্সটি রানিং রয়েছে। তবে কোনো যন্ত্রপাতি নেই। কমপ্লিট না থাকার কারণে এটি সার্ভিসে নেওয়া যাচ্ছে না।

গ্যারেজ সূত্রে জানা যায়, একটি গাড়ির জন্য দৈনিক ১ লিটার তেল বরাদ্দ রয়েছে। যে কারণে গাড়িগুলো গ্যারেজবন্দি থেকে যাচ্ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে গাড়িগুলো ১ হাজার ৪৩৪ বার রোগী আনা-নেওয়া করেছে। কিন্তু গত ৮ মাসে মাত্র ২৮০ বার রোগী আনা-নেওয়া করা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স শাখায় ড্রাইভার রয়েছে মাত্র ২ জন। আউটসোর্সিংয়ে আরও একজন ড্রাইভার নেওয়া হয়েছে। যদিও হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার পদ রয়েছে ৯টি।

সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক নজরুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, গত ৪-৫ মাস থেকে আমাদের তেলের বাজেট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে সার্ভিস কমে গেছে। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। এছাড়া ৯ পদে আমরা মাত্র দুজন ড্রাইভার রয়েছি। তাই ড্রাইভার বৃদ্ধি করা জরুরি।

এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের এমন দুরবস্থার সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। তারা সিন্ডিকেট করে রোগী ও তার স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। তবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উলটো সিন্ডিকেট হাসপাতালের পরিবহণ সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে। সর্বশেষ রোববার ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ধর্মঘট পালন করে।

এর আগেও এমনটা করে তারা। যদিও তাদের অনেকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় গত বছর ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে নামে-বেনামে হাসপাতালের স্টাফরা জড়িত। যে কারণে তাদের কোনোভাবেই আটকানো যায় না।

এ ব্যাপারে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, কিছু অ্যাম্বুলেন্স আছে যা আর ব্যবহার উপযোগী নয়। আবার কিছু আছে যা মেরামত করলেই হবে। এ বিষয়ে আমরা ঢাকাতে লিখেছি। বিআরটিএ যে গাড়িগুলো বাতিল বলবে, সেগুলো নিলামে দেব।

বাকিগুলো অল্প টাকায় মেরামত করার সুযোগ থাকলে মেরামত করাব। আমাদের চালক কম রয়েছে। চালক নিয়োগ হলে তেলের সমস্যার সমাধান হবে। আর অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে যদি কোনো স্টাফের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।