দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির (পিপিএ) মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী খাতের কোম্পানি ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেড ২২ মেগাওয়াট নরসিংদী পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকারের বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে থাকে।

গত মাসে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে পিপিএ শেষ হওয়ায় কোম্পানিটি টাঙ্গাইলে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। দুটি চুক্তি অনিশ্চিত হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডোরিন পাওয়ারের চুক্তি না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যেতে পারছে না। এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ কমানোর আশঙ্কা রয়েছে।

২০০৮ সালে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট দুটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে এবং সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ১৫ বছরের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। ইতোমধ্যে চুক্তির ১৫ বছর শেষ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত নতুন কোনো চুক্তি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে ফেনীতে অবস্থিত ডোরিন পাওয়ারের অবশিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পিপিএ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে।

ডরিন পাওয়ারের স্বাধীন নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান তাদের পর্যালোচনায় বলেছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে কোম্পানির তিনটি পাওয়ার প্লান্ট আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। ২০২২-২৩ বছরের নিরক্ষণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি ডোরিন পাওয়ারের আর্থিক প্রতিবেদনে বিষয়ে উল্লেখ করেছে।

এদিকে বিপিডিবি বা বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের সঙ্গে কোম্পানিটি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। তবে সে আবেদনে এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি।

ডরিন পাওয়ারের কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ আমজাদ সাকিল বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আমরা নিজেরা ব্যবহার করি না। আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করি। সরকারের সঙ্গে আমাদের ১৫ বছরের চুক্তি ছিল। এ চুক্তি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। নতুন চুক্তির জন্য আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবেদনের আলোকে নতুন চুক্তি হয়নি।

তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, এ জন্য চুক্তি হতে সময় লাগছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার এলে তখন আবার নতুন চুক্তি হতে পারে বলে তিনি জানান। ডরিন পাওয়ারের তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। এখানে ডোরিন পাওয়ারের প্রায় শতভাগ শেয়ার রয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ডোরিন পাওয়ার লিমিটেডের প্রথম প্রান্তিকে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯৯ পয়সা।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ ছিল নিম্নমুখী, ৬ টাকা ০৭ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ০৫ পয়সা। এদিকে প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৫২ টাকা ২৮ পয়সা। এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডোরিন পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) কমেছে ২ দশমিক ৫৯ গুণ। একই সঙ্গে কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় আলোচ্য সময়ের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে।

নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সমাপ্ত হিসাব বছরে ডোরিন পাওয়ারের সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছর ছিল ৯ টাকা ২১ পয়সা। গত জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকা ৪৭ পয়সায়। আগের বছরে ছিল ৪৭ টাকা ৪৬ পয়সা।

২০২১-২২ বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশের পাশাপাশি উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে বাকি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ডোরিন পাওয়ার। এ সময় কোম্পানির সমন্বিত ইপিএস হয়েছিল ১০ টাকা ৩১ পয়সা। গত বছরের জুন শেষে কোম্পানিটির সমন্বিত এনএভিপিএস ছিল ৫৩ টাকা ১৫ পয়সায়।

২০২০-২১ বছরের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল ডোরিন পাওয়ার। এর সময় সব শেয়ারহোল্ডারের জন্য ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে বাকি শেয়ারহোল্ডারদের ১৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭ টাকা ২৩ পয়সা। এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছিল ৪৩ টাকা ২২ পয়সায়।

২০১৯-২০ হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল ডোরিন পাওয়ার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছিল কোম্পানিটির সব শেয়ারহোল্ডার। আর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছিল উদ্যোক্তা পরিচালক বাদে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের। এ সময় কোম্পানিটির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মোট ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নগদ লভ্যাংশ পেয়েছিলেন।

২০০৮ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ডোরিন পাওয়ার জেনারেশনস অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্দান ও সাউদার্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ডোরিন পাওয়ার ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।