স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আশা প্রত্যাশা অনেক থাকলেও ২০২৩ সালটি খুব একটা ভালো কাটেনি বিনিয়োগকারীদের জন্য। তবে নতুন বছরের শুরুতে প্রথম দুই কার্যদিবস দরপতনে নতুন করে আতঙ্ক ভাবিয়ে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে অতীতের হতাশা দূরে ঠেলে স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের প্রত্যাশায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।

সদ্য বিদায়ী বছর পুঁজিবাজারের সূচকে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। বছরজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করে। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী মুনাফা করতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। নতুন বছরে গতিশীল পুঁজিবাজার চান বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পুঁজিবাজার ব্যাপক পতন রোধ করতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বেশির ভাগ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে আছে। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। এ অবস্থায় ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার চান বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনার কারণে ডিএসইএক্স ৩০০০ পয়েন্টের নিচে নেমে যায়। এ সময় শেয়ারের অবাধ পতন সীমিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজারে বিশৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। একই সঙ্গে লেনদেন যেমন নেমে আসে তলানিতে। তেমনি বিদেশি বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে হ্রাস পেতে থাকে। পুঁজিবাজারে এমন খারাপ অবস্থা ২০১০ সালে পর আর দেখা যায়নি।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০২৩ সাল সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। পুঁজিবাজার এই চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত ছিল না। বাজারে বড় সমস্যা ছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক আরোপিত ফ্লোর প্রাইস। এতে বাজারে লেনদেন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। ফেরত পাওয়া যায়নি বিনিয়োগের অর্থ। বাজারে সব ধরনের অংশীজনদের আয় কমেছে। এ সব পদক্ষেপ অংশীজনদের সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপের কারণে লেনদেন কমে গেছে। বিশ্বের কোনো দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস নেই। ফ্লোর প্রাইসের কারেণ দেশের বাজারের লেনদেন নেমে এসেছে গড়ে ৫০০ কোটিতে। এটা না থাকলে আমাদের পুঁজিবাজারের লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা হতে পারত।

বাংলাদেশ ব্যাংক তার সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং সম্প্রতি নীতিগত হারও বাড়িয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে জ্বালানি ভর্তুকি আরও হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়ন মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। আটকে যাওয়ার ভয়ে তারা নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি পুনরুদ্ধারের সূচনা করবে বলে প্রত্যাশা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, বাজারের আস্থাসংকট দূর করতে করপোরেট গভর্নেন্সকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ‘নতুন বছরে, প্রত্যাশা থাকবে যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করবে।’