আলমগীর হোসেন,  দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লাগাম টানতে গত কয়েকদিনে র‌্যাব ও পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহন থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের সময় তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে নগদ টাকা, রসিদ ও চাঁদা আদায়ের কাজে ব্যবহূত বিভিন্ন জিনিসপত্র। তবে এসব চাঁদাবাজদের গডফাদাররা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। মুলত চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচল করা বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা। অবৈধ এসব চাঁদাবাজির নেপথ্যে আছেন কয়েকজন শ্রমিকনেতা। তাঁদের কেউ কেউ আবার হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিও।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা, অক্সিজেন, পাহাড়তলী, এ কে খান মোড়ে যানবাহনের চারটি স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে সরাসরি চাঁদা আদায়ে যুক্ত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। ওই অভিযানের বিষয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় শুধু সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে মাসে ৪০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে।

ওই এলাকায় প্রতিদিন চা-নাশতার খরচ বাবদ সরাসরি চাঁদা উত্তোলনকারীদের জন্য ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। অভিযানে ওই এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। পাহাড়তলী থানাধীন হোটেল মেরিনের সামনে, অক্সিজেন মোড় এবং এ কে খান মোড়েও বাস-মিনিবাস ও অটোটেম্পো থেকে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে বলেও জানায় র‌্যাব।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানান, এসব চাঁদার টাকা কয়েকজন ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই কয়েকজন শ্রমিক সংগঠনের নেতা। মূলত তাঁরাই এসব চাঁদা আদায় নিয়ন্ত্রণ করেন। কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় আবুল হোসেন ও সাহেদ রানা নামের দুজনের নাম উঠে এসেছে। আবুল হোসেন হলেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন (১৪৪১) নামে একটি শ্রমিক সংগঠনের কাপ্তাই রাস্তার মাথা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, চুরিসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ গত ৭ সেপ্টেম্বর আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও মোহরা এলাকায় মা ও ছেলেকে অস্ত্র, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান আবুল হোসেন। পরে জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় যানবাহনে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সাহেদ রানা হলেন একই সংগঠনের আরেক নেতা।

র‌্যাব আরও জানায়, পাহাড়তলী এলাকায় অবৈধভাবে উত্তোলন করা চাঁদার টাকা যায় শ্রমিকনেতা খলিলুর রহমানের কাছে। তিনি সীতাকুণ্ড অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে রয়েছেন। অক্সিজেন মোড়ে নূরুল হক পুতু নামের এক ব্যক্তির হাতে চাঁদার টাকা জমা হয়। তিনি হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে আছেন। এ কে খান মোড় এলাকায় চাঁদার টাকা জমা হচ্ছে সমু নামের এক ব্যক্তির হাতে। সমু হলেন লুসাই পরিবহন বাসের মালিক ও শ্রমিকনেতা। সব কটি সংগঠনই ফেডারেশনভুক্ত।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা ওয়েবিলের নামে নিজেদের সদস্যদের পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন চালক-মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছেন। পুলিশসহ স্থানীয় ক্যাডারদের ম্যানেজ করে এসব নেতাই মূলত যানবাহনে চাঁদা-বাণিজ্য ধরে রেখেছেন।

এ বিষয় জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের জন্য ৩০ টাকা ও মালিকেরা ৩০ টাকা করে চাঁদা নিতে পারবে। এসব টাকা পরে কোনো শ্রমিক মারা গেলে বা অসুস্থ হলে অনুদান দেওয়া হয়। সাধারণত স্টার্টিং ও লোডিং টাইমে এই চাঁদা নেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারের নিয়মের বাইরে আমাদের ফেডারেশন অতিরিক্ত কোনো চাঁদা উত্তোলন করে না।’

বৃহত্তর চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ওয়েবিলের নামে মূলত অবৈধ চাঁদাবাজি চলছে। এসব চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য কমাতে র‌্যাব সম্প্রতি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহাবুব আলম বলেন, ‘আসামিদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টদের দাবি, মূলহোতারা আড়ালে থেকে যাওয়ায় এ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্রমতে, এসব চাঁদাবাজদের একটি বড় অংশ সরকারি দলের নেতাকর্মী। এ কারণে তাদের গ্রেপ্তার করতে পিছু হটতে হয়েছে। যদিও র‌্যাবের দাবি, মূল হোতাদের তালিকা ধরে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতাদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে কিছু নামের তালিকা করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কৌশল পাল্টে কিংবা পর্দার আড়ালে থেকে তারা চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে পারবে না।

জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা অভিযানের প্রথম দিনে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ধারাবাহিক আরও অভিযান চালিয়ে ৫১ জন এবং র‌্যাব-১ এর অভিযানে ৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা সবাই চাঁদা ওঠানোর কাজে যুক্ত ছিল। পণ্যবাহী পরিবহনের মালিক-চালক ও শ্রমিকরা জানান, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনার পর র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে রাস্তাঘাটে চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত দিনভিত্তিক মজুররাই শুধু ধরা পড়ছে। চাঁদাবাজ চক্রের গডফাদাররা বরাবরের মতো অধরাই রয়ে গেছে।

এরই মধ্যে তারা অনেকেই কৌশল পাল্টে চাঁদাবাজির রেট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বগুড়া থেকে সবজি নিয়ে ঢাকায় আসা একাধিক ট্রাকচালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধরপাকড় অভিযানের মধ্যেও সড়ক-মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে আগের মতোই চাঁদাবাজি চলছে। আগে পথে পথে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা আদায় করা হতো। মাঝে টোকেন বা কার্ড দিয়ে পুরো মাসের চাঁদা তুলে নেওয়া হতো।

এখন কোথাও কোথাও সেই ‘টোকেন প্রথা’ বদলেছে। ওইসব পয়েন্টে এখন চাঁদাবাজি হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাসিক চুক্তির টাকা পরিশোধ করছেন ট্রাকমালিকরা। পুলিশ ট্রাক আটকানোর পর মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলেই ট্রাক ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে পণ্যবাহী পরিবহনের চাঁদাবাজদের ধরতে পুলিশে দায়িত্ব দেওয়া হলেও এ ক্ষেত্রে তারা কতটা নিষ্ঠার সঙ্গে তা পালন করবে তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেকেই সন্দিহান। তাদের অভিযোগ, পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজির সঙ্গে হাইওয়ে, থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। কোথাও কোথাও তারা নিজেরাই এ চাঁদা আদায় করছে। কোথাও আবার এ কাজে শ্রমিক শ্রেণির মানুষ নিয়োগ দিয়েছে। এছাড়া সরকারি দলের চাঁদাবাজ নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের আঁতাত থাকারও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান হাটের সবজির মোকাম থেকে শসা, মুলা, বরবটি, পটোল ও করলা নিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে আসা ট্রাকচালক শাহাবউদ্দিন জানান, ২২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে এখনো ১১ পয়েন্টে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে ৭টি স্পটে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এবং ৪টি স্পটে রসিদ দিয়ে চাঁদাবাজরা চাঁদা নিচ্ছে। এর আগে ১৩টি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হতো বলে জানান এ ট্রাকচালক।

বগুড়ার একই হাট থেকে ছেড়ে আসা সবজিবাহী আরেক ট্রাকের হেলপার সবুজ মিয়া জানান, সাভারের আগ পর্যন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতে ১৩০০ টাকা এবং সাভার থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত রসিদের বিপরীতে ৬৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। ওই ট্রাকে মাল নিয়ে আসা সবজি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর দাবি, সোমবার থেকে চাঁদাবাজ ধরপাকড় অভিযান শুরুর পর সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি তেমন কমেনি। ফলে পরিবহন ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ আগের মতোই রয়ে গেছে। তাই মহাস্থানহাট থেকে পাইকারিতে কেনা শসা, কাঁচামরিচ, বেগুন, করলা, বরবটি, পটোল, ঝিঙা ও পেঁপেসহ প্রতিটি সবজিই কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। চাঁদাবাজি বন্ধ হলে অনায়াসেই এ টাকা কমে তারা সবজি বিক্রি করতে পারত।

বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির এক নেতার দাবি, দেশে প্রতিদিন ৯০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান চলাচল করে। এর কোনোটিই পুলিশকে চাঁদা না দিয়ে চলতে পারে না। সড়ক-মহাসড়কে ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে একেকটি স্পটে ৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। এ চাঁদা যেমন হাইওয়ে পুলিশ নেয়, তেমনি মালিক ও শ্রমিক সমিতির নামেও আদায় করা হয়। এছাড়া সরকারি দলের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরাও নিয়মিত চাঁদা নিচ্ছে।

চাল ব্যবসায়ী মাহতাব আলীর অভিযোগ, বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে একটি ট্রাককে এখনো অন্তত ১২ জায়গায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। এগুলো নির্দিষ্ট চাঁদা। এর ওপর ‘হঠাৎ’ চাঁদাও রয়েছে। গড়ে একটি ট্রাককে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা গুনতে হয়।

বাজার পর্যবেক্ষকরা জানান, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বিভিন্ন ফেরিঘাট, ওজন স্টেশন, বাজার কমিটি, পরিবহন সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা-পুলিশের নামে এখনো তোলা হচ্ছে চাঁদা। গত কয়েকদিনে ‘র‌্যাব-পুলিশের’ অভিযানে যারা ধরা পড়েছে তাদের একজনও চাঁদাবাজ চক্রের মূল হোতা নন। এদের সবাই চুনোপুঁটি।

পুলিশ এদের ১০ জনকে ধরলে ওইদিনই আরও ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ এক স্পটে অভিযান চালালে চাঁদাবাজরা অন্য স্পট বেছে নিচ্ছে। চাঁদাবাজ চক্রের রাঘব বোয়ালদের ধরতে হলে সরকারকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অথচ চাঁদাবাজদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পর প্রতিবারই প্রশাসন পুরনো পথেই হাঁটছে।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, পরিবহন খাতে ব্যাপক চাঁদাবাজির ফলে কৃষকের জমি থেকে উঠে আসার পর জায়গায় জায়গায় হাতবদল হতে হতে ক্রেতার কাছে পৌঁছতেই ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। যার প্রভাব পড়ছে সরাসরি ভোক্তাদের ওপরই। এ নিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনের তোড়জোড় শুরু হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কুড়িগ্রাম, ভুরুঙ্গামারী, নরসিংদী ও সিলেটসহ দেশের প্রায় অর্ধডজন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার বাজারে প্রতিটি সবজি যে দরে বিক্রি হচ্ছে তারা এর এক-তৃতীয়াংশ দরেও স্থানীয় হাটে তা বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে একদিকে ভোক্তাদের যেমন নাভিশ্বাস উঠছে, অন্যদিকে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এদিকে শুধু পণ্যবাহী পরিবহনেই চাঁদাবাজি হচ্ছে তা নয়, খোদ রাজধানীর প্রতিটি বাজার এবং বেশকিছু রাস্তাতেও এখনো নিয়মিত চাঁদাবাজি চলছে। রাজধানীর মালিবাগ বাজারে একজন ব্যবসায়ী জানান, কারওয়ানবাজার থেকে এক ভ্যান সবজি দোকান পর্যন্ত আনতে এখনো অন্তত দেড়শ থেকে দুইশ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। এছাড়া বাজার থেকেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অজুহাতে নিয়মিত চাঁদা তুলছেন। এমনকি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যান সবজি বিক্রি করতে হলেও পুলিশ ও রাজনৈতিক ক্যাডারদের চাঁদা দিতে হচ্ছে।

পুলিশের একজন সাবেক ডিআইজি এ প্রসঙ্গে বলেন, সড়ক-মহাসড়ক, বাজার কিংবা পাড়া-মহল্লা থেকে চাঁদা তোলা মজুর কিংবা লাইনম্যানদের গ্রেপ্তার করে চাঁদাবাজি বন্ধ করা যাবে না। তা নির্মূল করতে হলে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়িয়ে চাঁদাবাজ চক্রের গডফাদারদের চিহ্নিত করতে হবে। পাশাপাশি গোপন অনুসন্ধান চালিয়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরি। যাতে তাদের গ্রেপ্তার করে চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা যায়।

এছাড়া চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারকৃত গডফাদাররা যাতে আইনি ফাঁকফোকর গলে দ্রুত জামিনে বেরিয়ে আসতে না পারে এজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকা জরুরি। শুধু চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তার করে চাঁদাবাজি বন্ধ করা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এ সাবেক কর্মকর্তা। তার এ আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা গত কয়েকদিনে র‌্যাব ও পুলিশের টানা অভিযানের মধ্যেও চাঁদাবাজি চলমান থাকায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজ চক্র তাদের কৌশল ও স্পট পরিবর্তন করেও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। র‌্যাব ও পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করছে তাদের বেশির ভাগই নিম্নআয়ের মানুষ। মূল হোতারা চাঁদাবাজির টাকায় গাড়ি-বাড়ি করে আরাম-আয়েসে দিন কাটাচ্ছে। অথচ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ নেই।