মোঃ সিরাজুল মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) স্লিপ কেনাবেচা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাতুনগঞ্জে বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি ও গম বাজারে আসার আগেই নির্দিষ্ট প্রতিনিধির মাধ্যমে অগ্রিম ডিও বিক্রি করেন মিল মালিক ও আমদানিকারকরা। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ভিত্তিক তিনটি শিল্পগ্রুপ সবচেয়ে বেশি ডিও স্লিপ বিক্রি করে। বাজারে পণ্য আসার আগেই কয়েক দফা হাতবদল হয় এসব স্লিপের। ফলে প্রায় সময় এক প্রকার ‘হাওয়া’র ওপর এসব পণ্যের বাজার উঠানামা করে।

অভিযোগ রয়েছে, ডিও স্লিপ বিক্রির পর যে দরে পণ্যের ডিও বিক্রি হয়, কোনো কারণে যদি বাজার দর বেড়ে যায়, তখন পণ্যের ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি, কিন্তু আমদানিকারক তার মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে ডিও বিক্রি করে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না।

জানা গেছে, ডিও স্লিপ বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়ে অতীতে বেশ কয়েকবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযানে নামে। কিন্তু অভিযানের খবরে সব সময় ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যায়। আবার কয়েকটি স্লিপ প্রশাসনের কর্মকর্তারা হাতে পেলেও সেগুলোতে পণ্যের নাম ও দাম ছাড়া আর কিছুই লিখা থাকে না। ফলে ডিও স্লিপ বিক্রি করার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে না প্রশাসন।

খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের একজন আড়তদার আবুল কাশেম বলেন, ডিও স্লিপের পণ্য ডেলিভারির নেয়ার আগে তারা ক্রেতাকে সাদা কাগজে একটি সিরিয়াল নম্বর ধরিয়ে দেন। সেই সিরিয়াল নম্বর দেখিয়ে পরবর্তীতে তারা পণ্য ডেলিভারি নেন। এক্ষেত্রে পণ্য ডেলিভারি দিতে গড়িমসি করলেও ক্রেতার কিছুই করার থাকে না। এদিকে খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, পাম তেল ৪ হাজার ৮৬০ টাকা, সয়াবিন তেল ৫ হাজার ৬৮০ টাকা এবং প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৪০ টাকায়।

এ বিষয় জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, খাতুনগঞ্জের ডিও স্লিপ বিক্রির বিষয়টি আমরা অবগত আছি। কিছুদিন আগে খাতুনগঞ্জে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মহোদয় ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সেই সময় আমরা বাজার ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কথা শুনেছি। আসলে ব্যবসায়ীরা চান না, খাতুনগঞ্জে আমরা অভিযান পরিচালনা করি।

আমরা তেল–চিনির মিল কিংবা গম আমদানিকারকের কাছ থেকে কারা কারা পণ্য নিচ্ছেন সেগুলো বের করার চেষ্টা করছি। তাদের পণ্যের টোটাল সাপ্লাই চেইনটা বের করা সম্ভব হলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। ক্রেতা বিক্রেতাদের অভিযোগ পণ্য ক্রয়ে আরব দার প্রতিষ্ঠানের চাপানো রশিদ ব্যবহার না করায় মাঠ পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা পন্যের দাম বাড়াতে সুযোগ নেই এতে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। সঠিক চালান না থাকায় শুধুমাত্র সাদা কাগজে পন্য খালাস করায় আমদানি করা পণ্যের সাথে বিক্রয়ের কোন মিল থাকেনা।