দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ওয়েবসাইটে ফের কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। লেনদেন শুরুর পর থেকে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত ডিএসইর ওয়েবসাইটটিতে সূচক সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখাচ্ছে। ফলে পুঁজিবাজারের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

ওয়েবসাইটিতে সূচক সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এখনো ভুল দেখাচ্ছে। সূচকের গ্রাফ হালনাগাদ হচ্ছে না। ফলে আজকের পুঁজিবাজারের প্রকৃত তথ্য ডিএসই থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। দিনশেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দেখাচ্ছে ১৪১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। আর সূচক কমেছে ৫ হাজার ৯৭১ পয়েন্ট। এ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

মাসুদ নামে একজন বিনিয়োগকারী ডিএসইর দেয়া ত্রুটিযুক্ত তথ্যসংযুক্ত স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে পোস্ট করে লিখেন, যদি ডিএসইর এই অবস্থা আসলে হয়ে থাকে তাহলে ভালোই হয়েছে। আস্তে আস্তে মরার চাইতে একবারে মরে যাওয়া ভালে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, এই যে এখন যে ভুল সূচক দেখাচ্ছে, এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে তো আমরা একবারেই শেষ। আর এমন একটা ভুল হয় কীভাবে। আর ভুল হলেও এটা ঠিক করতে কত সময় লাগে? এভাবে কি একটা দেশের প্রধান পুঁজিবাজার চলতে পারে? তাদের আইটি টিম কি এতই অক্ষম যে এই ত্রুটিটা ঠিক করতে পারছে না?

তথ্য অনুযায়ী, রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের শুরুতেই ওয়েবসাইটে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। রোববার সকাল ১০টায় স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরু হয়। তখন থেকেই ওয়েবসাইটে ভুল তথ্য দেখানো শুরু হয়। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ডিএসই ব্রড ইনডেক্স ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬ হাজার ১২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে দশমিক ৩৯ পয়েন্ট দেখায়।

অথচ তখন পর্যন্ত বাজারে ২২৬টি কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যার মধ্যে ১৫৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এরপর দিনশেষে দেখায় ডিএসইএক্স ১৪১ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট। এতে দেখায় দিনশেষে সূচক কমেছে ৫ হাজার ৯৭১ পয়েন্ট। এরমধ্যে দেখা যায় ৮৪টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে এবং ২৬১টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৪৭৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

আলোচিত সময়ে শরীয়াহ সূচক ডিএসইএসের অবস্থান দেখানো হয় দশমিক ০৪ পয়েন্ট, যা আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। অন্যদিকে বাজার মূলধনের দিক থেকে বৃহৎ ৩০ কোম্পানির মূল্যসূচক ডিএস৩০ এর অবস্থান দেখানো হয় ২ হাজার ৯৬ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট, যা আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা দশমিক ১০৬ শতাংশ বেশি। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ওয়েবসাইটে মূল্যসুচক তিনটির সব তথ্য দেখানো হয় শূন্য। এদিকে সূচকের গ্রাফেও কোনো তথ্য ছিল না বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

ওয়েবসাইটের তথ্য বিভ্রান্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। আশা করা যায় খুব শিগগিরই এটা সমাধান হয়ে যাবে। আমরা এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেব।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বিভ্রান্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর প্রকাশনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান বলেন, রোববার সকাল থেকে ডিএসইর ওয়েবসাইটে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। সকাল থেকেই এ সমস্যা সমাধানে ডিএসইর আইটি টিম কাজ করছে। এ ছাড়া ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ এ বিষয়ে মিটিং করছে। শিগগিরই এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাবে ডিএসই।