আস্থা সংকট থাকায় বাজারমুখী হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা

শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের পঞ্চম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচকের কিছুটা উত্থান হলেও আতঙ্ক কাটছে না বিনিয়োগকারীদের। মুলত আস্থা সংকট থাকায় বাজারমুখী হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা দেশের সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজার আজ রূপকথার গল্পের মতো, নানা সংকটে বিধ্বস্ত। পতনের তাণ্ডব চলছে দীর্ঘদিন।
পুরো বাজার কাঠামোই দুর্বল অস্তিত্বে টিকে আছে। মূল্যস্তর তলানিতে। যেখানে একটা সিগারেটের দামে মিলছে ৬ থেকে ৭টি শেয়ার। ক্রমেই রক্তাক্ত হচ্ছে পুঁজিবাজার। দেখার যেন কেউ নেই। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি আস্থা সংকটে ভুগছে বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে বিএসইসির চেয়ারম্যানের একেক সময় একেক হুটহাট সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে দীর্ঘ দরপতনে দেশের পুঁজিবাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা এতোটাই ভারি হয়েছে যে, তারা বাজারে আসাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমনকি অনেক বিনিয়োগকারী বড় লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। তাই বিনিয়োগকারীদের বাজারমুখী করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আগে আস্থা ফেরাতে হবে।
এদিকে সপ্তাহের পঞ্চম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। সেইসঙ্গে বেশিরভাগ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতে সপ্তাহের পঞ্চম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের পঞ্চম কার্যদিবসে লেনদেনের শুরু থেকেই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকে বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেন শুরুর অল্প সময়ের মধ্যেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে একাধিক মিউচুয়াল ফান্ড। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। তবে মিউচুয়াল ফান্ড দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকলে বেশিরভাগ ভালো কোম্পানির শেয়ার দামও বাড়তে থাকে।
এতে এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে শেয়ার বিক্রির চাপে কিছু কোম্পানির শেয়ার দাম কমে যায়। এতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাও কমে। তবে মিউচুয়াল ফান্ড ও বেশিরভাগ ভালো কোম্পানিগুলোর কল্যাণে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট তারল্য সংকট নয়। আস্থা সংকট কাটলে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবে। বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হলে লেনদেন বাড়বে। তাছাড়া দীর্ঘদিন টানা দরপতনে আস্থা সংকট থাকায় অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বাজারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যে কোন মূল্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে হবে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮০১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫০ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৭ টির, দর কমেছে ১০৫ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৭ টির। ডিএসইতে ৩২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯৭ কোটি ৭১ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৩ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৩ টির এবং ২৮ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।