মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের তহবিল ব্যবহার নিয়ে তদন্ত করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) এবং জিরো-কুপন বন্ড ইস্যু করার মাধ্যমে সংগৃহীত ৩৩২ কোটি টাকা যথাযথভাবে ব্যবহার করেছে কি না, তা তদন্ত করতে একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এ বিষয়ে চিঠি ইস্যু করে বিএসইসির পক্ষ থেকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।

মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড আইপিও থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করেছে, সেই টাকা আইন অনুযায়ী খরচ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বিএসইসি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে তিন সদস্যের একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন কে। কমিটির অন্য সদস্যদ্যের মধ্যে রয়েছে মো. শাহনৌস ও সহকারী পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন ‘মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের আইপিও এবং জিরো-কুপন বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩৩২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। তহবিলের অর্থ ইতোমধ্যে যথাযথভাবে ব্যয় হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখবে বিএসইসি। এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে, মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে বিএসইসির চিঠি পাওয়ার পর তারা কমিশনে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর প্রয়োজনীয় নথি পাঠিয়েছে। জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে, বিএসইসি মীর আক্তারকে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ, সরঞ্জাম ক্রয় এবং ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। দরপত্রের পর মীর আক্তারের শেয়ারের কাট-অফ মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৬০ টাকা। আইপিও তহবিলের অর্থ ১৮ মাসের মধ্যে ব্যবহার করার কথা ছিল।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময়ে অর্থ খরচ করতে পারেনি। ২০২২ সালের মার্চ মাসে কোম্পানিটিকে ঋণ পরিশোধ এবং মূলধনের ভিত্তি বাড়ানোর জন্য ২৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার শূন্য কুপন বন্ড ইস্যু করার অনুমতি দেয়। এর ইস্যু মূল্য ছিল ২০৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানির রাজস্ব কমেছে ২৬ শতাংশ। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এক বছর আগে ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ উক্ত সময়ে মুনাফা কমেছে ২৪ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৮০ পয়সা। এবং শেয়ার প্রতি নিট সম্পদের মূল্য দাড়িয়েছে ৫০ টাকা ৫৯ পয়সা। ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিদের হাতে ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত দেশের একমাত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের হাতে বর্তমানে ৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকার ৩৩টি প্রকল্প রয়েছে। বর্তমানে চলমান কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে: ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন, পায়রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ ও সারা দেশে অনেক সড়ক প্রকল্প।

মীর আক্তারের চেয়ারপারসন সোহেলা হোসেন বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেন, বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এর মধ্যে মীর আক্তার দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। এতে কোম্পানি মুনাফা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ব্যবসায় ঝুঁকি মোকাবিলা করতে বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্যে দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য বিনিয়োগকারিদের জন্য ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েচে।

প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে মীর আক্তার হোসেনে। এ সময় কোম্পানিটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৯৩ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৩ টাকা ৮০ পয়সা। ২০২১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় মীর আক্তার হোসেন। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৩৫০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭।