ব্যাংক খাত এখন আর বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গায় নেই: শিবলী রুবাইয়াত
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, খেলাপি ঋণের কারণে চাপের মুখে রয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। ফলে খাতটি এখন আর বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত জায়গায় নেই।
সোমবার বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) উদ্যোগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
‘বাংলাদেশে টেকসই অর্থায়ন: বাস্তবায়নের কৌশল ও বিকল্প’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবীর, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনূসুর রহমান ও এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বিএপিএলসির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ মাহমুদ। আর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশরাফ আহমেদ।
খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাতের চাপের মুখে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ব্যাংক খাত আর বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গায় নেই। এর পরিবর্তে সম্ভাবনার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে টাকা খাটানোর আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, বিএসইসির চেয়ারম্যান ব্যাংক খাত এখন আর বিনিয়োগের উপযুক্ত জায়গায় নেই বলতে বুঝাতে চেয়েছেন, ব্যাংক খাতে এফডিআরসহ অন্যান্য বিনিয়োগের কথা বলেছেন। শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতের শেয়ার বিনিয়োগ এখনো অনেক উপযোগি রয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো বেশি বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে আগামী দুই বছরে আরো নতুন পণ্য চালু করা হবে। কমিশন টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করা এবং সেকেন্ডারি মার্কেটকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে। দেশে সবুজ অর্থায়নকে উৎসাহিত করতে নতুন বন্ড ইস্যুর পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের জিডিপি ও বাজার মূলধনের অনুপাত মাত্র ২১। যেখানে ভারতে এটি ৭৬ এবং ভিয়েতনামে ৫৭। আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে আমাদের জিডিপি ও বাজার মূলধনের অনুপাত শতভাগে উন্নীত করতে হবে। এজন্য বর্তমানের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সঠিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক হিসাবে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন পাওয়া যায় না। ইস্যু ব্যবস্থাপকসহ অন্যদেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে।
এমসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নিহাদ কবির তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের ঋণ ব্যবস্থা ভুল নীতির ওপর চলছে। স্বল্পমেয়াদে ঋণ নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করছি। দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে বাজারটিকে আরো উন্নত করতে হবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. ইউনূসুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার জন্য ব্যাংক খাত তার দায় এড়াতে পারে না।
সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম সবুজ অর্থায়নের ক্ষেত্রে সুদহারে ছাড় দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, বাজারকে আরো গতিশীল করতে ব্লু বন্ড চালু করা যেতে পারে।
মূল প্রবন্ধে রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আশরাফ আহমেদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতি বছর ৬৬ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এর মাত্র ৪ শতাংশ ব্যাংকের পক্ষে দেয়া সম্ভব। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পুঁজিবাজার সবচেয়ে ভালো বিকল্প।