দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নতুন বছরের প্রথম দিন ভোরবেলা ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করে খারাপ কিছুর ইঙ্গিত দেন আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। সেই ছবিতে দেখা যায়, বিছানার চাদর এবং কোলবালিশে রক্তের কয়েকটি ছোপ। কয়েক ঘণ্টা পার না হতে জানা গেল, ওই রক্ত আসলে পরীমনির। স্বামী শরিফুল রাজ তাকে মেরে রক্তাক্ত করতেন। রবিবার পৌনে ৫টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে এ কথা জানিয়েছেন পরীমনি স্বয়ং। সেখানে নায়িকা এও উল্লেখ করেছেন, কেন তিনি রাজের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

পরীমনি যা লিখেছেন স্ট্যাটাসে‘:একটা সম্পর্কে পুরোপুরি সিরিয়াস বা খুব করে না চাইলে একটা মেয়ে বাচ্চা নেয়ার মতো এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কখনোই। আমার জীবনের সবটুকু চেষ্টা যখন এই সম্পর্কটাকে ঠিকঠাক টিকিয়ে রাখা তখনই আমাকে পেয়ে বসা হলো। যেন শত কোটি বার যা ইচ্ছে তাই করলেও সব শেষে ওই যে আমি মানিয়ে নেই এটা রীতিমতো দারুন এক সাংসারিক সুত্র হয়ে দাঁড়ালো।’

‘আমি জোর দিয়ে বলতে পারি আমাদের এই সম্পর্ক এত দিন আমার এফোর্টে টিকে ছিল শুধু। কিন্তু বারবার গায়ে হাত তোলা পর্যায়ে পৌঁছালে কোনো সম্পর্কই আর সম্পর্ক থাকে না। স্রেফ বিষ্ঠা হয়ে যায়। রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বার বার সব ভুলে যাই। সব ঠিক করার জন্যে পড়ে থাকি। কিন্তু তাতে কি আসলেই আমার বাচ্চা ভালো থাকবে! না।’

‘একটা অসুস্থ সম্পর্ক এত কাছে থেকে দেখে দেখে ও বড় হতে পারে না। তাই আমি, রাজ্য এবং রাজের মঙ্গলের জন্যেই আলাদা হয়ে গেলাম। রাজ এখন শুধু আমার প্রাক্তনই না, আমার ছেলের বাবাও। তাই রাজ্যের বাবার সম্মান রাখতে পাবলিকলি আর বাকি কিছু বলছি না আমি।’ ‘তবে আমার উপর তার আর তার পরিবারের কোনো অসুস্থ আচরণ বা হার্মফুল কিছু করার চেষ্টা করলে আমি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।’

‘সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মী যারা রয়েছেন আপনারা নিশ্চয়ই আমার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারবেন আশা করছি। আমাকে একটু সময় দিন। শারীরিক ভাবেও আমি বিধ্বস্ত। রাজ্য তার বাবা-মাকে একসাথে নিয়ে বড় হতে পারলো না, এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে আমার কাছে!’

এর আগে রবিবার ভোর ৬টায় রক্তমাখা বিছানার চাদর ও কোলবালিশের ছবি দুটি পোস্ট করে পরীমনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার। সংবাদ সম্মেলন, লোডিং….’। অর্থাৎ অভিনেত্রী খুব শিগগির তার এবং রাজের সম্পর্ক নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে চলেছেন বলে ইঙ্গিত দেন। তার আগে ফেসবুকেই সবকিছু পরিষ্কার করে দিলেন।

তারও আগে গত শুক্রবার মধ্যরাতে ফেসবুকে পরীমনি রাজের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমি আজ রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম এবং নিজেকেও মুক্ত করলাম একটা অসুস্থ সম্পর্ক থেকে। জীবনে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে জরুরি আর কিছুই নেই।’

ওই পোস্টের পর পরীমনি গণমাধ্যমকে জানান, এখনো রাজের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়নি। তবে তিনি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে রাজের বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। নায়িকা বলেন, ‘আজ থেকে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম। শিগগির বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে দেব।’

পরীমনি আরও বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই সমস্যা হচ্ছিল। সমস্যা কাটিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছি, পারলাম না। তার (রাজ) আচার-আচরণ একসঙ্গে থাকার পরিস্থিতিতে নেই। তাই বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে আলাদা হয়ে গেলাম।’

পরীমনির ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের সূত্রে জানা যায়, রাজের সঙ্গে তার সংসারজীবন বেশ কিছু দিন ধরেই ভালো কাটছিল না। এটা শুধু এতদিন তাদের কাছের মানুষেরাই জানতেন। তারা নানাভাবে দুজনকে বুঝিয়েছেনও। নিজেরাও নিজেদের মতো করে চেষ্টা করেছেন সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু কিছুতেই যেন তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।