দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: আজ আমরা সোমালিয়া আসলাম। আসার পর তাদের (জলদস্যুদের) সঙ্গে আমাদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়েছে। বলে-কয়ে একটু কেবিনে আসলাম। সবাইকে দোয়া করতে বলিও। আল্লাহ যেন এটা সহজ করে দেয় রোজার উসিলায়। ইনশাআল্লাহ আমরা আশা করি ঈদের আগেই পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবো। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) পরিবারের কাছে পাঠানো মেসেজে এভাবেই নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মো. আতিকউল্লাহ খান।

তিনি বলেন, ‘মানসিকভাবে যতদিন শক্ত থাকা যায়। তোমরাও ভালো থাকিও, সবাইকে দোয়া করতে বলিও। আমরা যেন নিরাপদে আসতে পারি। আমরা ব্রিজে (জাহাজের ডেক) বসে বসে সবাই আল্লাহ আল্লাহ করি আরকি। সবাই আল্লাহকে ডাকি। আল্লাহ আমাদের ডাক শুনবে ইনশাআল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন ‘সবাই আমাদের জন্য দোয়া করছে। সরকারও পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের কোম্পানিও আল্লাহর রহমতে এ বিষয়ে সজাগ আছে। বিশ্ব মিডিয়াও আমাদের নিয়ে কথা বলছে।’ এদিকে দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ বাংলাদেশের নাবিকদের উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে জাহাজের এ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল একটা নেভি জাহাজ আসছিল। আজও একটা নেভি জাহাজ আসছে। মোট দুটি জাহাজ মিলে আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। কারণ তারা তখন আমাদের জিম্মি করে রাখে, মাথায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে।’

‘দুটি বড় বড় ফ্রিগেট আসছিল। সব ইকুইপম্যান্ট নিয়ে। কিন্তু তারা (জলদস্যুরা) এসবে ভয় পায় না। কারণ তারা আমাদের জিম্মি করে রাখে। আমাদের মাথায় গুলি ধরে রাখে। আমাদের তারা রেস্ট্রিকটেড করে রাখে। তবে এখন পর্যন্ত হার্ট (আঘাত) করেনি।’ নিজেদের সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই একটা রুমে (ব্রিজে) ঘুমাচ্ছি। একটা ওয়াসরুম ব্যবহার করছি। এভাবে আমাদের অভ্যাস নেই। যখন ঘুমাতে যাই, দেখা যায় বড় বড় অস্ত্র তাক করে আছে। এভাবে কী ঘুম আসে? যা হওয়ার হচ্ছে আরকি।’

এ নাবিক বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ এখনো খাবার আছে। তারা (জলদস্যুরা) আমাদের সঙ্গে খাচ্ছে। পানি ব্যবহার করছে। তাই আমাদের এ খাওয়া কতদিন যায় বলা যাচ্ছে না। ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর যখন খাবার শেষ হযে যাবে, তখন আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাবো।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে সেটি সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যায় তারা। জাহাজটিতে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন।

এস আর শিপিংয়ের অধীনে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি পরিচালিত হতো। এরআগে ২০১০ সালেও একই প্রতিষ্ঠানের জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। দীর্ঘ ৩ মাস পর ২৬ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত হয়। জাহাজটির মালিক পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজ এবং নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে।