দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন হয়নি। সরকারের পতন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অন্দোলনের মুখে। তিনি বলেন, আমরা সব সময় বৈষম্য ও দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল ছাত্ররা রাজনীতিতে আসতে চায় না।

তিনি আরও বলেন, ‘কেউই বুঝতে পারেনি, ছাত্ররা এতটাই রাজনীতি সচেতন। প্রমাণ করেছে, ছাত্ররা আমাদের চেয়ে বেশি রাজনীতি বোঝে।’ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘ছাত্রদের প্রধান শক্তি হচ্ছে, একতা আর দ্বিতীয় শক্তি হচ্ছে, জনগণের আস্থা। ছাত্রদের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল— তারা দেশের জন্যই আন্দোলন করেছে। সেজন্যই ছাত্রদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে এবং ক্ষমতা ও লোভ লালসার বাইরে থাকতে হবে।’

কাদের আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমরা শুরু থেকেই ছাত্রদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলাম। কোটা পদ্ধতির বিপক্ষে আমরা সংসদে কথা বলেছি। সংসদের বাইরেও বক্তৃতা ও বিবৃতিতে আমরা বলেছি— চাকরিতে কোটা পদ্ধতি হচ্ছে সংবিধান পরিপন্থি। আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, টাকাপাচার, বৈষম্যের মাধ্যমে জাতিকে বিভাজন করার বিরোধিতা করে আমরা সব সময় কথা বলেছি।’

‘সংসদে আমি শেখ হাসিনার সামনেও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। যখন মানুষের নিরাপত্তা ছিল না… জীবনের নিশ্চয়তা ছিল না, তখনও আমরা সরকারের সমালোচনা করতে পিছপা হইনি। আওয়ামী লীগ আমাদের দলকে নষ্ট করতে চেয়েছে, একইসঙ্গে আমাদের রাজনীতি করতেও বাধা দিয়েছে।’

‘দল না থাকলে রাজনীতি থাকে না, আবার রাজনীতি না থাকলে দলও থাকে না। জনগণের পক্ষে রাজনীতি না থাকলেও দল থাকে না। আমাদের রাজনীতির জন্য দলকে স্যাকরিফাইজ করতে হয়েছে। আবার, দলের জন্যও রাজনীতি স্যাকরিফাইজ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমাদের দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।’

‘জাতীয় পার্টি সব সময় জনগণের সঙ্গেই ছিল। তাই, ৩৪ বছর পরেও জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে টিকে আছে। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে কেইউ কিছু চিন্তা করে না। আমরা এখনই নির্বাচন চাই না। কারণ, ভালো নির্বাচন আমরা অতীতে অনেক দেখেছি। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার হয় না। ভালো নির্বাচনের পরে ভালো সরকার দেখতে চাই। যাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে। যারা ব্যক্তিগত ও দলীয় সম্পদ হিসেবে দেশকে ব্যবহার করবে না।’ বলেন জাপা চেয়ারম্যান।

জিএম কাদের বলেন, ‘সেই ধরনের সরকারের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সেজন্য বর্তমান সরকারকে আমরা সময় দিতেও রাজি আছি। ভালো নির্বাচনে নির্বাচিত সরকার বেশিরভাগ সময়ে স্বৈরশাসক হয়েছিল। কিন্তু, অনির্বাচিত সরকারগুলো অনেক বেশি গণতন্ত্রমনা ছিল। অনির্বাচিত সরকারগুলোই জনগণের মতামতের বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই অনির্বাচিত সরকারকে সংস্কারের জন্য সময় দিতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা চাই, বর্তমান সরকার যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারে, দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, কর্মসংস্থান যেন থাকে… তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক হিসাব-নিকাশ আছে। আওয়ামী লীগ মাঠে নেই, কিন্তু তাদের একটি সমর্থক গোষ্ঠী আছে। আগামী নির্বাচনে তাদের একটা ভূমিকা থাকবে। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় না এসেই তাদের নেত-কর্মীরা যে অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা সাধারণ মানুষ পছন্দ করছে না। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির মুখোমুখি অবস্থা। কেউ দখলবাজি শুরু করলে, ছাত্ররা তার প্রতিবাদ করছে। শেষ পর্যন্ত জনগণ কার পক্ষে থাকবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। জাতীয় ছাত্রসমাজকে আরও সংগঠিত হতে হবে।’